ISBN: 978-93-5788-820-2


তারাপদ দারোগার থানা বাড়ি by দেবাশিস ভট্টাচার্য্য
₹299.00
আমি দারোগার ছেলে বলেই হয়তো দারোগাদের আমি ছোট থেকেই নিজের লোক বলে মনে করি। অবশ্য সেই মুঘল আমল থেকেই দারোগাদের লাগাতার দুর্নাম, তারা নাকি লোভী অসৎ অত্যাচারী। ব্রিটিশ আমলে এবং নকশাল আন্দোলনের সময় বিপ্লবীরা অকাতরে দারোগা মেরে বাহবা পেয়েছে। নকশালরা মন্ত্রী নেতা শিল্পপতির বদলে সামান্য বেতনের সরকারি কর্মচারীদের সংসার উজাড় করে দিয়েছে। পুঁচকে, স্বল্প মাইনের দারোগাদের অনেক যুগ ধরে দায়িত্বের তুলনায় বেতন ছিল যৎসামান্য, পুরস্কারের চেয়ে তিরস্কার ছিল অনেকগুণ বেশি। সৎ দারোগাদের খুবই সমস্যা ছিল বলতে পারেন, আমার মা স্কুলে পড়িয়ে বাবাকে সাহায্য না করলে হয়তো আমাদের রীতিমত দারিদ্র্যের মধ্যে গিয়ে পড়তে হত। আমি আমার জীবনে খুব কাছ থেকে এমন দারোগা দেখেছি যারা খুঁটিয়ে তদন্ত করত, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অপরাধীর সাজা ও অপরাধের কিনারা ও সুবিচার করত। এও দেখেছি এসব করতে গিয়ে রাজনৈতিক ও ক্ষমতাশালী ব্যক্তির কোপে পড়ে কি নির্যাতন সইতে হয়েছে সেসব দারোগাকে।
তা ঘটনাটা হল এই যে তারাপদ দারোগা একদিন আমার কাছে এসে হাজির হলেন একদম হঠাৎ করে, বহুযুগের ওপার থেকে এক বর্ষার সন্ধ্যায়। বাড়ি বসে একটা প্রবন্ধ লেখার চেষ্টা করছি হঠাৎ দেখি ছায়া ছায়া কেউ একজন, রবার দিয়ে কিছুটা মুছে ধেবড়ে যাওয়া ছবির মত, ছ ফুটের উপর লম্বা, চওড়া কাঁধ পাতলা কোমর, অস্পষ্ট অবয়বে একটা চিতা বাঘের মত ভাব, খাকি পোশাক, মাথায় ক্যাম্বিসের টুপি, মুখটা ভাল করে দেখতে পাচ্ছি না কিন্তু মজা ও একাকীত্বের একটা মিশ্রণ দুই উজ্বল চোখে, একটু ঘসা ঘসা গলায় শুনতে পেলাম।
– অ মশয় করেন কি?
একটু বিরক্ত হয়ে বলি
– কি আবার করব, দেখছেন না কাজ করছি?
সেই মূর্তি আমার বিনা অনুমতিতে একটা মোড়া টেনে নিয়ে বসে বলে
– আপনের সঙ্গে ইয়ে আমার কিছু কথা আছিল। তা ভাবলাম বর্ষার দিন হয়তো একটু ফাঁকা পাইতে পারি
– আপনি কি আমাকে চেনেন?
– চিনি না মশয় কিন্তু অন্যভাবে বলতে পারেন চিনি।
– সেটা কিরকম?
– আপনের পিতা পুলিশ ছিল না? আমিও পুলিশ।
আমি বললাম আপনার চেহারাটা এমন ধোঁয়া ধোঁয়া লাগছে কেন বলুন তো ?
– মশয় আমি তো ধোঁয়াই। কিন্তু জীবনে প্রত্যেকটা ইনভেস্টিগেশন করতে গিয়াই দেখছি যে ধোঁয়ার পিছনে আগুন থাকবেই।
আপনার আগমনের কারণ জানতে পারি?
– আপনে পুলাপানের মত বাদলের রাতে চা খাইতাছেন কেন?
– আপনি চা পছন্দ করেন না?
– চা আছে চায়ের জায়গায়, একটু থেমে গলা ঝেড়ে বললেন, আমি ধুতরার সামান্য রস মিশায়ে লইতাম।
মানুষটা সেই যে এল আর যাবার নামটি করে না। এ আমার বাবার মত প্রেসিডেন্সিতে পড়া রবি ঠাকুর আবৃত্তি করা রামকৃষ্ণ ভক্ত দারোগা নয় সেটা অবিলম্বে বুঝতে পারলাম। অবশ্য সত্যি বলতে কি তারাপদ দারোগা যে কি জিনিশ তা আজও ঠিক করে বুঝে উঠতে পারিনি। তবে ধুতরো ও অন্যান্য উগ্র নেশা মদ্যপান বেলাগাম সাহস আর উচ্ছৃঙ্খল জীবনের বাইরে তারাপদ ছিলেন আরও অনেক কিছু। একজন অসামান্য মানুষ। তিনি আমার হাত ধরে একটা আশ্চর্য জগতে নিয়ে গেলেন। সেখানে মানুষখেকো বাঘ আর তার চেয়েও বিপদজনক হিংস্র জানোয়াররা বসত করে যাদের বাইরে থেকে মানুষ বলে মনে হয় কিন্তু তারা অমানুষের চাইতেও অনেক বেশি। গভীর গহন জঙ্গল আর জঙ্গলের ভিতরে বাইরে নদী নালা খাঁড়ি। আমার বাড়ি ছাড়ার আগে সুন্দরবনের দারোগা তারাপদ আমায় হদিশ দিয়ে যান এমন একটা কাহিনীর যার মধ্যে আমি নেশাগ্রস্তের মতন ঘুরে বেড়াই।
তারাপদ অবশ্য হুমকি দিয়ে গেছেন আবার আসবেন। সত্যি? কবে আসবেন, তারাপদ?
100 in stock
Weight | 0.400 kg |
---|---|
Dimensions | 10 × 13.97 × 21.59 cm |
You must be logged in to post a review.
Reviews
There are no reviews yet.